হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ - হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

বার্ধক্য জনিত কারণে এবং বর্তমানের কর্মব্যস্তময় জীবনে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং খাদ্যাভাসের কারণেই সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তবে হার্ট অ্যাটাক শব্দটির সাথে আমরা খুব বেশি পরিচিত হলেও হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায়, হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় এসব সম্পর্কে আমরা অতটা ওয়াকিবহাল নই।
হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ - হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

“স্বাস্থ্য” এর আজকের এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় সহ হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। সবগুলো বিষয় জানতে হলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। .

হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ

হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পেতে হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ জানা অত্যন্ত জরুরী যদিও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার জন্য পূর্ব থেকে অসুস্থ হওয়া জরুরি নয়। অর্থাৎ একজন সুস্থ মানুষও যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের যে সাধারণ লক্ষণ গুলো রয়েছে সেগুলো কোনটিই প্রকাশ পায় না অথবা কোন একটি সামান্যভাবে প্রকাশ পায়। 
আবার হার্ট ফাউন্ডেশন এর তথ্য মতে এক এক ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বা উপসর্গ এক এক রকম ভাবে প্রকাশ পায় অর্থাৎ সবার এক রকম উপসর্গ হয় না। হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে যেগুলো দেখে আমরা সহজেই শনাক্ত করতে পারি যে কেউ হার্টটাকে আক্রান্ত হয়েছে।
  • বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হয় বিশেষ করে বাম দিকে যেটি পরবর্তীতে বাহু, পিঠ, চোয়াল এবং পিঠে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
  • হার্ট অ্যাটাকের পরে অনেকক্ষণ সময় পেরিয়ে গেলেও যদি চিকিৎসা না দেওয়া হয় তাহলে হার্ট ঠিকমতো কাজ করে না ফলে শরীরে পানি জমতে শুরু করে এবং সর্বপ্রথম ফুসফুসে পানি জমে। ফলে শ্বাসকষ্টের সাথে সাথে কাশি শুরু হয়। এটি হার্ট ফেইলিয়র এর একটি অন্যতম উপসর্গ।
  • মাঝারি থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • প্রচন্ড পেট ব্যথা হতে পারে। এসিডিটি বা বদহজমের কারণে সৃষ্ট পেট ব্যথার চেয়েও তীব্র হয়।
  • বিশেষ করে বাম হাত এবং ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
  • হাঁটাহাঁটি বা দৌড়াদৌড়ি না করা সত্ত্বেও স্বাভাবিক অবস্থায় বুক ব্যাথার সাথে যদি অতিরিক্ত ঘাম শুরু হয় তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ।
  • হাতের পালস বা নাড়ি দুর্বল এবং অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং অনবরত ঘামতে থাকে।
  • হার্ট অ্যাটাকে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে মাথা ঘোরার সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে পারে।
  • কখনো কখনো আক্রান্ত ব্যক্তির বমি বমি ভাব হয় অথবা বমি করেও ফেলতে পারে।
উপরের উপসর্গ গুলোর যে কোন একটি অথবা কোনটিও প্রকাশ নাও পেতে পারে। কিছু কিছু হার্ট অ্যাটাক সামান্য বুকে ব্যথা দিয়েই হতে পারে যেটাকে অনেকেই তুলনা করতে পারে এসিডিটি বা বদহজমের কারণে সৃষ্ট বুক ব্যথার সাথে। আক্রান্ত ব্যক্তির কোন লক্ষণ দেখে যদি হার্ট অ্যাটাক মনে হয় তবে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। “দুঃখিত” বলার চেয়ে একটি জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা উত্তম।

হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বা চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই জানা অত্যন্ত জরুরী নিজের জন্য অথবা অন্য কারো জন্য হোক। সাধারণত কোন ব্যক্তি হার্ট এটাকে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বিষয়গুলো জানা থাকলেও সেই মুহূর্তে তিনি নিজে কিছু করার মত অবস্থায় থাকেন না। তাই সেই ব্যক্তির সামনে বা আশেপাশে যারা থাকেন তাদেরই এগিয়ে আসতে হয়। 
কোন ব্যক্তিকে যদি দেখেন বুকে হাত দিয়ে প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছে অথবা কাতরাতে কাতরাতে পড়ে যাচ্ছে অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে তাহলে তাৎক্ষণিক করণীয় হিসেবে নিজের কাজগুলো করা অত্যন্ত জরুরী সেই লোকটিকে বাঁচানোর জন্য।

ধাপ ১
সবার প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে বসতে বলুন দেয়ালে বা গাছে হেলান দিয়ে। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির হার্টে চাপ কম পড়বে। প্রয়োজনে আপনি ধরে বসান। তাকে শান্ত হতে বলুন এবং আশ্বস্ত করুন যে তার বিপদে আপনি তার পাশে রয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মোটা কাপড়ের জামা অথবা আটোসাটো পোশাক পরে থাকে তবে সেটি খুলে আলগা করুন। 

আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নারী হয় তবে অবশ্যই আশেপাশে কোন নারীর সাহায্য নিন। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তি কে জিজ্ঞেস করুন তার হার্টের কোন সমস্যা আছে কিনা অথবা সমস্যা থাকলে এর জন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করেন কিনা। কোন ওষুধ গ্রহণ করে থাকলে নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে সে ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন। 

আর যদি আক্রান্ত ব্যক্তি সেই মুহূর্তে ওষুধের নাম মনে করতে না পারেন তবে 300 মিলিগ্রাম এর একটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট চিবিয়ে খেতে বলুন। অ্যাসপিরিন রক্ত তরল করে এবং ধমনীতে রক্ত সরবরাহে সাহায্য করে। তাছাড়া কোন রোগী যদি আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন তবে তাৎক্ষণিক সেই অবস্থায় জিহ্বার নিচে এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি অবশ্যই রোগীকে জিজ্ঞেস করে প্রয়োগ করতে হবে।

ধাপ ২
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার কোন উন্নতি না হয় তবে জরুরি ভিত্তিতে এম্বুলেন্স অথবা জরুরী চিকিৎসা সহায়তা সংস্থায় কল করতে হবে। ফোন করে আপনার অবস্থান সহ তাদেরকে বলুন যে সন্দেহ করছেন আপনার সামনের ব্যক্তিটির হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এই অবস্থায় কিছু কিছু রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে। 
রোগীর অবস্থা যদি আরো অবনতির দিকে যায় এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাহলে অ্যাম্বুলেন্স আসার আগ পর্যন্ত CPR (Cardio Pulmonary Resuscitation, হার্ট অ্যাটাকের রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করার জন্য রোগীর বুকের উপর হাত দিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চাপ দেয়া) শুরু করুন।

হার্ট অ্যাটাকের কারন

আমাদের শরীরকে সঠিকভাবে সচল রাখতে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাশাপাশি প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা জরুরী। আর অক্সিজেন সরবরাহের মত এই জরুরি কাজটি করে থাকে আমাদের হার্ট বা হৃদপিণ্ড। হাট বা হৃদ যন্ত্রের এ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য হার্টে পর্যাপ্ত পরিমাণের রক্ত সরবরাহ থাকতে হবে। 
ধমনী বা রক্ত নালী দিয়ে রক্ত হার্টে প্রবেশ করে এবং হার্ট থেকেই রক্ত সেই নালীর মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পৌছায়। কোন কারনে রক্তনালিতে যদি কোলেস্টেরল বা ফ্যাট জমা হয়ে ব্লক তৈরি হয় তাহলে রক্ত সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না এবং হার্টে রক্তের ঘাটতি হতে শুরু করে। হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছায় অক্সিজেনের অভাব হয় এবং হৃদপিন্ডের মাংসপেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কোষগুলো মরে যেতে শুরু করে। 

তখন হৃদপিণ্ড তার স্বাভাবিক কার্যক্রম হারাতে শুরু করে। এ অবস্থাকেই বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট অ্যাটাক কে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। ইনফার্কশন বলতে এখানে হৃদপিন্ডের টিস্যুর মৃত্যুকে বোঝায়।
হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ - হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

কাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে?

আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম হার্ট অ্যাটাক বিষয়টি কি! হার্ট অ্যাটাক শিশু-কিশোর তরুণদের মাঝে হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বিশেষ এবং জটিল কোন রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও অনেক সময় এই বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ৪০ বছর বয়স পার হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

তাছাড়াও যাদের ধূমপানের নেশা রয়েছে, বিশৃংখল জীবন যাপন করেন, খাবার এবং ওজনের প্রতি সচেতন নন তারা যে কোন সময় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। কায়িক পরিশ্রম কম করেন এবং মানসিক চাপে থাকেন সব সময় এরকম ব্যক্তিরাও হার্ট এটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ যাদের রয়েছে তারাও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। 

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার পূর্ব শর্ত হলো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে হার্টে ধমনী শিরায় ফ্যাট বা চর্বি জমে বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাৎ ব্লকের মাধ্যমে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের সূত্রপাত ঘটায়। তাই আমাদের হার্টে যেন কোন ধরনের ফ্যাট বা চর্বি না জমতে পারে তার জন্য আমাদের কিছু পদ্ধতি মেনে জীবন যাপন করতে হবে। তাই হার্ট এটাকে যাতে আক্রান্ত না হন সেজন্য কিছু উপায় রয়েছে চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।
  • প্রত্যেকদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। বাসায় নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন, জিমে গিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন অথবা সকালে এবং বিকালে নিয়মিত একঘন্টা করে হাঁটতে পারেন অথবা বিকালে এক ঘন্টা দৌড়াতে পারেন। আপনার সুবিধামত শরীরচর্চা বেছে নিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে নিজেকে সুরক্ষা করুন।
  • একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা মেনে চলুন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই শাকসবজি এবং ফলমূল রাখুন। সাপ্তাহে একদিন যেকোন মাংস অল্প পরিমাণে খান তবে মাছ খেতে পারেন প্রতিদিন। আর চর্বি জাতীয় খাবার, মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেলতেলে খাবার, যেকোনো ফাস্টফুড, পিতজা, বার্গার ইত্যাদি এসবের দিকে ভুলেও তাকাবেন না। এসব খাবার আপনার হার্টে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল জমাতে সাহায্য করে।
  • পান-জর্দা, তামাকজাত দ্রব্য, ধূমপান, অ্যালকোহল ইত্যাদি নেশার বদ অভ্যাস থাকলে দ্রুত পরিহার করুন।
  • বিশ্বের কুখ্যাত কিছু অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের মত গুরুতর সমস্যা থেকে থাকে তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে জীবন যাপন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনি খেতে খুব পছন্দ করেন? ভোজনবিলাসী? হার্ট অ্যাটাক থেকে যদি বাঁচতে চান তবে আজকে থেকেই বাসায় কিংবা দাওয়াতে গিয়ে কব্জি ডুবিয়ে অথবা উদর ভর্তি করে রিচ ফুড যেমন মাংস, পোলাও, কোরমা, বিরিয়ানি খাবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিন।
  • ভোজন রসিক হওয়ায় আপনার শরীর কি ওজনে দুই মনেরও বেশি? তাহলে আজকেই সিদ্ধান্ত নিন মুখরোচক খাবার খেয়ে নিজেকে মোটু বানাবেন নাকি সুস্থ থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাবেন? যদি সুস্থ থাকতে চান তবে স্ট্রীট ফুড, ভাজাপোড়া এসব খাওয়া বন্ধ করে দিন।
  • আমাদের শরীরের জন্য ঘুম বিনা পয়সার একটি ওষুধ। তাই দিনে অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা নিশ্চিন্তে ঘুমান। শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকবে আর মন সুস্থ থাকলে মানষিক চাপ কম থাকবে ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমবে।
  • প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য ধ্যান, যোগব্যায়ামে মত স্ট্রেস মুক্তি মূলক কার্যকলাপে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে।
  • আপনার বয়স যদি ৩০ পার হয়ে থাকে তাহলে ৬ মাসে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হার্ট চেকআপ করতে পারেন। আর যদি আপনি হার্টের রোগী হয়েই থাকেন তাহলেও মাসে অন্তত একবার আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কারো হার্ট অ্যাটাক হলে যেসব কাজ করবেন না

আমাদের সামনে কারো হার্ট অ্যাটাক হলে আমরা অনেক সময় অজান্তেই কিছু ভুল করে ফেলি অথবা ইচ্ছাকৃত কোন কাজ নাও করতে পারি। তো চলুন জেনে নেয়া যাক হার্ট অ্যাটাক হলে কি কি কাজ করা উচিত নয়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে কখনো একা ছেড়ে যাবেন না। আপনি যদি মনে করেন আক্রান্ত ব্যক্তিকে আপনি একা সামলাতে পারবেন না তবে প্রয়োজনে আরো লোকের সহায়তা নিন। মনে রাখবেন এই পরিস্থিতিতে হয়ত একদিন আপনি নিজে অথবা আপনার পরিবারের কেউ পড়তে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির পরিস্থিতি বা শারীরিক অবস্থা দেখে আপনি নিজে কখনো আতঙ্কিত বা হতাশ হবেন না। নিজেকে সংযত রেখে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য যা যা করা দরকার ঠান্ডা মাথায় তা করার চেষ্টা করুন।
  • রোগীকে কখনো মনে করতে দিবেন না যে তার চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। বরং আপনি তাকে সাহস দিন এবং চিকিৎসার জন্য সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিন। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিকভাবে সাহস হারাবে না।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো উপসর্গ বা লক্ষণকেই হালকা বলে মনে করবেন না। কোন উপসর্গ বা লক্ষণ এর ব্যাপারে যদি আপনার কোন সংশয় থাকে তবে দ্রুত নিকটস্থ নিকটস্থ হসপিটাল কিংবা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যান অথবা অ্যাম্বুলেন্সে খবর দিন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে কখনোই কোন যানবাহন চালিয়ে অথবা হেঁটে হাসপাতালে যেতে দেবেন না। কারণ হাঁটাচলা বা নড়াচড়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।

হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের পার্থক্য

হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক আমাদের জীবনের জন্য দুটি মারাত্মক ভয়ংকর রোগ। এই দুটির প্রত্যেকটি আমাদের মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো মোটামুটি একই রকম সামান্য কিছু বিশেষ পার্থক্য ছাড়া। তবে আমরা অনেকেই এদুটো করে একত্রে গুলিয়ে ফেলি। কিসের জন্য হার্ট অ্যাটাক হয় এবং কিসের কারণে স্ট্রোক হয় তা অনেক সময় অজান্তে অথবা না জানার কারণেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। তাই স্ট্রোক এবং হার্ট এটাকের পার্থক্য জানাটা অত্যন্ত জরুরী।
  1. হার্ট অ্যাটাক মূলত হৃদপিন্ডে রক্ত সরাবোবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় অর্থাৎ এটি একটি হৃৎপিণ্ড সম্পর্কিত সমস্যা। অন্যদিকে স্ট্রোক মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে বা মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিড়ে গেলে সৃষ্টি হয় অর্থাৎ এটি মস্তিষ্ক সম্পর্কিত সমস্যা।
  2. হার্ট অ্যাটাক হলে দেহ অবশ বা অসাড় হয় না। কিন্তু স্টক হলে রোগীর এক পাশ অথবা পুরো শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে।
  3. খিচুনি হওয়া, কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা কথা আটকে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া বা জিহ্বা বের হয়ে যাওয়ার মত সমস্যাগুলো স্ট্রোকের ক্ষেত্রে দেখা যায়। হার্ট এটাকে এ ধরনের কোন সমস্যা হয় না।
  4. হার্ট অ্যাটাক নির্ণয়ের জন্য কার্ডিয়াক এনজাইম, ইসিজি, ইকোসহ প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তবে স্ট্রোক নির্ণয়ের প্রাথমিক পরীক্ষা হচ্ছে সিটি স্ক্যান।
  5. পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগ নির্ণয় করা হলে করোনারি কেয়ার ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিতে হয় হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে। তবে স্ট্রোকের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে রোগ নির্ণয় করা হলে নিউরো কেয়ার ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ - হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

অবশেষে
উপরে আলোচনা থেকে বুঝলাম হার্ট অ্যাটাক কতটা ভয়ংকর এবং মারাত্মক হতে পারে এমনকি আমাদের জীবন নাশও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের কারণে। মূলত সচেতনতার জন্যই আজকের এই আর্টিকেল লেখা। হার্ট অ্যাটাকের ব্যাপারে আমরা নিজেরা সচেতন হব এবং অন্যদেরকে সচেতন করব, প্রয়োজনে অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
যাইহোক, হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় সহ আরও কিছু তথ্য জানানোর চেষ্টা করলাম। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকে এখানেই শেষ করছি। সহজ ভাষায় নিজের মত করে আপনাদের সামনে তথ্যগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যদি ভালো লেগে থাকে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন এরকম তথ্যবহুল লেখা পড়তে। সবাই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url